ঢাকা , শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​নৌযান ধর্মঘট

উত্তরের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ বন্ধ

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ২৭-১২-২০২৪ ০৬:০৩:০৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৮-১২-২০২৪ ১০:৩৩:০০ পূর্বাহ্ন
উত্তরের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ বন্ধ
চাঁদপুরে এমভি আল বাখেরা জাহাজে ৭ নাবিক হত্যার প্রতিবাদ, দোষীদের কঠোর শাস্তি, নিহতদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান ও নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে সারাদেশে চলছে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতি। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে শুক্রবার ভোররাত থেকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। হঠাৎ ঘোষিত এই কর্মসূচিতে বিপাকে পড়েছে দেশবাসী। শ্রমিকদের কর্মবিরতির ফলে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বন্ধ রয়েছে জ্বালানি তেল, সারসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ। দক্ষিণঞ্চালের নদী বন্দরেও নেই তেলসহ পণ্য খালাসের কোন চিত্র। এ ধর্মঘটের কারণে বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরের পণ্য খালাস কার্যক্রম। বরিশালে পণ্যবাহী সব ধরনের নৌযান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের কারণে আশুগঞ্জ নদী বন্দরে আটকা পড়েছে মালবাহী কার্গো জাহাজ। শুক্রবার (২৭ডিসেম্বর) প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে ১৬ জেলায় সার সরবরাহ বন্ধ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান- চাঁদপুরে এমভি আল বাখেরা জাহাজে ৭ নাবিক হত্যার প্রতিবাদ, দোষীদের কঠোর শাস্তি, নিহতদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান ও নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে সারাদেশের সঙ্গে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে শুরু হয়েছে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে গত মধ্যরাত থেকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।

নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিতরীর ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি নৌবন্দরটি। বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর হয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল, সারসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ হয়ে থাকে। নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির ফলে জ্বালানি তেলসহ সব পণ্য পরিবহণ বন্ধ রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলবে বলে জানান নৌ শ্রমিকরা। এবিষয়ে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া বলেন আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু দাউদ মাস্টার বলেন, একজন ব্যক্তির পক্ষে একটা জাহাজ চালানো সম্ভব না। তাই আটক ব্যক্তির বক্তব্য সঠিক না। এ হত্যা পরিকল্পিত। এর পেছনে আরও লোক আছে। তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বাঘাবাড়ি নৌবন্দর লেবার এজেন্ট দুলাল হোসেন বলেন, নৌশ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে কোনো জাহাজ আসছে না। এ কারণে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে কোনো কাজ নেই। ফলে ৭০০ লেবার বেকার হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের চরম লোকসানে পড়তে হবে। বাঘাবাড়ি বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরবর্তীতে তারা যে সিদ্ধান্ত দেয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

পায়রা বন্দরে নৌ ধর্মঘট চলছে, বন্ধ পণ্য খালাস কার্যক্রম
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান- চাঁদপুরে জাহাজে সাত শ্রমিক হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দরে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের নৌযান ধর্মঘট। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়। 

এদিকে, এ ধর্মঘটের কারণে বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরের পণ্য খালাস কার্যক্রম। রাত থেকে বন্দরের আউটারে এবং ইনারে থাকা সকল মাদার ভ্যাসেল ও লাইটারেজ থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ রাখে শ্রমিকরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পায়রা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক ও মিডিয়া উইংস আজিজুর রহমান।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা জানান, এম. ভি. আল-বাখেরা জাহাজে মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা এবং সকল নৌপথে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত না হওয়ার কারণে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। রাত ১২টা থেকে মালবাহী, তৈল-গ্যাসবাহী, কয়লাবাহী ও বালুবাহীসহ সকল প্রকার পণ্যবাহী নৌযান চলাচল এবং পণ্য ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।

বরিশালে শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ
বরিশাল প্রতিনিধি জানান- চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাত শ্রমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে বরিশালের শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন। ফলে বরিশালে পণ্যবাহী সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টা থেকে মালবাহী, তেল-গ্যাসবাহীসহ সব প্রকার পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা এই কর্মবিরতি শুরু করেন। এসময় শ্রমিকরা সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, সব নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান এই কর্মবিরতির আওতামুক্ত রয়েছে। তবে কর্মবিরতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ব্যবসায়ীরা।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশালের নেতা একিন আলী মাস্টার জানান, নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিতে হবে। এছাড়া সব নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অবিলম্বে এই দাবিগুলো মেনে না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল আশুগঞ্জ নদী বন্দরের কার্যক্রম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান- চাঁদপুরে জাহাজে সাত শ্রমিক হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং জড়িতদের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের কারণে অচল হয়ে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নদী বন্দরের কার্যক্রম।

অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের কারণে আশুগঞ্জ নদী বন্দরে আটকা পড়েছে মালবাহী কার্গো জাহাজ। ধর্মঘটের কারণে নদী বন্দরে কার্গো জাহাজ থেকে বন্ধ রয়েছে পণ্য ওঠানামা। এতে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বেকার হয়ে পড়েছে বন্দরের শত শত শ্রমিক। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন্দরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
বন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে বন্দরে সার, রড, সিমেন্ট নিয়ে আসা কার্গো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। বন্দরের কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এতে বিপুল অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। 

বাংলাদেশ নৌ যান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে হরিনা ঘাটের কাছে মাঝেরচর এলাকায় এম. ভি. আল-বাখেরা জাহাজে সন্ত্রাসী কায়দায় নির্মম হত্যাকাণ্ডে মাস্টারসহ সাতজন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন, হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার, মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, সব নৌপথে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখনও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এজন্য রাত ১২টা ১মিনিট থেকে তৈল-গ্যাস, বালুসহ সব প্রকার পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, আশুগঞ্জ নদী বন্দরে প্রতিদিন সার, রড, সিমেন্ট, ধান, চাল, পাথর, কয়লাসহ কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য নিয়ে অর্ধশত জাহাজ নোঙর করে। এসব পণ্য আশুগঞ্জ থেকে নদী পথে ঢাকা, চন্দ্রগ্রাম, মোংলা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, নরসিংদী, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জসহ সারাদেশে যায়।

বাংলা স্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন/এসকে 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ